শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

তামাকের গ্রাসে কৃষি ও পরিবেশ




মুক্তমত
:বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে তামাক চাষ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে জোরদার আন্দোলনে চালিয়ে আসলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর এ বিষয়ে উদ্যোগ এখনো সমন্বিত ও আশানুরূপ নয়। তবে সম্প্রতি বান্দরবন জেলা জজ কোর্টের একটি রায়ে অত্র এলাকায় তামাক চাষ ১০০০ একরের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে, এটা একটি মাইল ফলক। সীমিত ভূখণ্ডের জনবহুল এদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে, না কি তামাকের মতো ক্ষতিকর দ্রব্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি করতে দেয়া হবে এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের দ্রুত পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণের দুর্বল নীতি বা অবস্থান দেশের কৃষি জমি ধ্বংস, খাদ্য সংকট, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সমস্যার মতো বিষয়গুলোকে প্রকট করে তুলবে।

আমাদের আবাদী জমির পরিমাণ খুবই সীমিত। তথাপিও সড়ক নির্মাণ, শিল্প স্থাপন, ঘরবাড়ি নির্মাণ, নদী ভাঙ্গন সহ বিভিন্ন কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশে কৃষি জমি ১ শতাংশ হারে হ্রাস পাচ্ছে। এদেশে ১৯৭১ সালে আবাদী জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১৭ হেক্টর। ১৯৮৬ সালে কমে দাড়ায় ৮১ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর এবং ২০০৩ সালে কমে দাড়ায় ৭০ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টরে। এমতাবস্থায় তামাক কোম্পানিগুলোর প্ররোচনার কারণে তামাক চাষ আগ্রাসীভাবে বিভিন্ন খাদ্য ভান্ডারের জমি দখল করে নিচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৭৪০০০ হেক্টর জমিতে তামাক হচ্ছে। বিগত ২ বছরে তামাক চাষ প্রায় ৬৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরাঞ্চলের খাদ্যভান্ডার বলে পরিচিত চলনবিল এখন দখল করে নিচ্ছে তামাক চাষ। পাবর্ত্য এলাকায় এ বিষের ছোঁয়া ব্যাপক।

তামাকের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫৭০০০ হাজার লোক মারা যাচ্ছে এবং ৩৮২০০০ লোক পঙ্গুত্ব বরণ করছে। এছাড়াও তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা খরচ বাবদ বরাদ্দ রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির পরিমান ১১,০০০ কোটি টাকা। তার উপর বাংলাদেশে ২৫ ভাগ পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। সারাদেশের অতিদরিদ্র মানুষ প্রধান খাদ্য চাল ক্রয়ে তাদের আয়ের ৭৬ ভাগ ব্যয় করে এবং শতকরা ৫৮ ভাগ পরিবার পর্যাপ্ত খাদ্য ক্রয় করতে পারে না। অপুষ্টিতে শিশু মৃত্যুর পরিমাণ প্রতিদিন ৯০০ জন। আর এসব অবস্থা বিবেচনা করে সরকারের তামাক চাষ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন। দুঃখের বিষয় হচ্ছে এধরনের বাস্তবতার পরও খাদ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনা না করে কিছু ব্যক্তিবর্গ তামাক কোম্পানির সাথে সুর মিলিয়ে তামাক চাষের স্বপক্ষে তাদের বক্তব্য তুলে ধরে থাকেন।

তামাক চাষ শুধুমাত্র খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, এই বিষবৃক্ষ চাষ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিপনন সকল ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত করছে জনসাধারণকে। তামাক এমন একটি ফসল যা চাষের কারণে জমির উর্বরতা হ্রাস পায় এবং এই জমিতে একসময় কোন ফসল ফলানো যায় না। তামাকের কারণে ৩টি মৌসুমের ফসলের ক্ষতি হয়। কারণ জমি তৈরি, বীজ বপন, পরিচর্যা, পাতা তোলা, গোড়া তোলা ইত্যাদি কারণে তামাক চাষের সময়কাল অক্টোরব থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৮ মাস। চাষীদের বক্তব্য অনুসারে তামাক চাষ করলে অন্য কিছু করার সুযোগ পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু প্রতিবছর অর্থ ও নানা প্রলোভনের কারণে চাষীরা তামাক চাষে নিয়োজিত হয়ে পড়ে।

গ্রামীণ কৃষক সমাজও দরিদ্রে এবং অনেক ক্ষেত্রেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই দরিদ্রকে পুঁজি করে তামাক চাষ ভয়াবহভাবে বিস্তার লাভ করেছে। তামাকের মূল্য অন্য যে কোন ফসলের চাইতে অনেক বেশি। তামাক কোম্পানির এ ধরণের বাহারী বিজ্ঞাপনের আড়ালে হারিয়ে যায় তামাক চাষের সমস্যাগুলো। প্রত্যেক চাষীই প্রতিবছর তামাক কোম্পানি হতে ঋণ নিয়ে তামাক চাষ করে, অথচ কোম্পানিগুলো প্রচারণা চালায় তামাক চাষ লাভজনক। তামাক যদি লাভজনক হয় তবে চাষী কেন প্রতিবছর ঋণ নেবেন? এই প্রশ্নটি কেউই করে না। অধিক মূল্য বিষয়টি কৃষকদের তামাক চাষে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। অনেক কৃষক তাদের ভাগ্য ফেরাতে, ধনী হবার আশায় কোন কিছু না ভেবেই তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠে। কারণ কৃষকদের বর্তমান অর্থনৈতিক দুরবস্থার পাশাপাশি, তারা প্রতিনিয়ত স্থানীয় মহাজনদের দ্বারা অর্থনৈতিকভাবে নিগৃহীত হতে হয়।

তামাক চাষে যে কৃষকের সামর্থ্য থাকে তারা শ্রমিক ভাড়া করে। কিন্তু অধিকাংশ চাষীর এ সামর্থ্য থাকে না। ফলে তামাক পাতা উঠানোর মৌসুমে বাড়ির নারী, পুরুষ শিশু সকলকে একসাথে মাঠে কাজ করতে হয়। এসময় শিশুরা স্কুল কামাই করে তাদের অভিভাবকদের সাথে মাঠে কাজ করে। এছাড়াও তামাক পাতা পোড়ানোর সময় আগুনের পাশে দিনরাত সর্তকভাবে বসে থাকতে হয়। ফলে তামাক চাষীদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এভাবে তাদের শিক্ষাজীবনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়ায় তারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা যায়, তামাক চাষ থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যন্ত সময়কালে বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলে বিদ্যালয়ে ছাত্রদের উপস্থিতির হার কমে যায়। শিক্ষা জীবনে সমস্যার পাশাপাশি শিশুরা স্বাস্থ্যগত দিক থেকে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন